সূর্যোদয় ও চেরিফুলের দেশের দিনলিপি-৯

Japanese people are very generous.আমাদের তো চিঠির কালে জন্ম। সো চিঠি এবং মেইলবক্সের প্রতি একটা টান ছিল সবসময়। ছোটবেলা স্বপ্ন দেখতাম আমার নিজের একটা মেইলবক্সের। তবে মেইলবক্স কখনো ছিলনা। আব্বুর পাঠানো চিঠি মামারা গিয়ে পোস্ট অফিস থেকে নিয়ে আসতেন বা পিয়ন এসে দিয়ে যেত। সৌদিতে গিয়ে আব্বুর অফিসের পোস্ট বক্স নিয়ে অভিজ্ঞতা হলো। পোস্ট অফিসে আব্বুর অফিসের নির্ধারিত পোস্টবক্স ছিল। পেছন দিক খোলা, ওখান দিয়ে পোস্ট অফিসের লোক চিঠি, ডকুমেন্ট ওগুলো রেখে দিত। আব্বু বা অফিসের অন্য কেউ গেলে সামনে দিয়ে খুলে নিয়ে আসতেন। এই জাপানে এসে আমার দুই দুইটা মেইলবক্স হয়ে গেল। বিল্ডিং এর নিচে একটা মেইলবক্স আর আমার এপার্টমেন্টের দরজার ভেতর দিকে লাগানো মেইলবক্স। দরজার সামনে একটা ফাঁকা আছে। ওদিকে পোস্টম্যান চিঠি ফেলে রেখে চলে যায়। সাধারণত জরুরী বার্তাগুলো দরজায় আসে আর সব নিচে। জাপানের পোস্ট সিস্টেম নিয়ে আরেকদিন লিখব।

তো কাহিনী হলো কী… মে মাসের ১৫তারিখ নিচে ময়লার ব্যাগ ফেলতে গিয়ে দেখি আমার মেইলবক্সের তালা ভাঙ্গা। কী ব্যাপার, এটা আবার ভাঙল কে? তালা নিয়ে আসলাম। আমার প্রজেক্টের লিড ডেভেলপার তাকাহাশি সান আর আমার সেলস ম্যানেজার আবে সানকে মেসেজে জানালাম। তাকাহাশি সান বললেন, কোন মোটিভ তো খুঁজে পাচ্ছিনা। নেক্সট টাইম হলে পুলিসকে জানিয়ো। আর আবে সান বলল (আবে সান বয়সে আমার জুনিয়র), হাউজিং কোম্পানীকে জানিয়ে রাখ। তো হাউজিং কোম্পানীর তদা সানকে মেসেজে জানিয়ে রাখলাম। লিখলাম, এটা কোন বিগ ডিল না, আমি জাস্ট আপনাকে জানিয়ে রাখলাম। এরপর আমি নতুন একটা তালা লাগালাম।

মে ২২, ডোরবেল বাজাল কেউ। দরজা খুলে দেখি কেউ নাই। দরজার নবে একটা ব্যাগ ঝুলানো। ওটাতে খাবার আর একটা এনভেলপে ২০০০ইয়েন। এদিক সেদিক দেখলাম, কেউ নাই। আমি প্রথমে ভাবলাম ডাক্তার সাজু ভাই হয়তো ঈদের গিফট দিয়ে গেছেন। উনি ছাড়া আমার বাসা আর কোন বাংলাদেশী চেনেনা। উনাকে কল দিলাম, বললেন, আমি আসিনি। তাকাহাশি সান আর আবে সানকে জানালাম আবার। রাহনুমা বলল, দেখ, যে তালা ভেঙ্গেছে সে হয়তো দিয়ে গেছে কম্পেনসেশন হিসেবে। তাকাহাশি সান কয়েকটা সম্ভাবনার কথা বললেন, তার মধ্যে একটা ছিল, এমন কেউ যে ফায়সালের কোন ক্ষতি করেছে। বললাম, তাহলে কি যে তালা ভেঙ্গেছে সে? বললেন, হ্যাঁ। আমি মোটামুটি শিউর সেই। বললাম, ১০০ ইয়েনের তালার জন্য সে এত কম্পেনসেশন দেবে? উনি বললেন, হৃদয় ভাঙ্গার কম্পেনসেশন তো বেশিই হয়। সে মেইলবক্সের তালা ভেঙ্গে তোমার মনে কষ্ট দিয়েছে। আবে সান আর তদা সানকেও জানিয়ে রাখলাম।

কিন্তু আমি তো মনে শান্তি পাচ্ছিনা।তাই পরেরদিন, মেইলবক্সে ধন্যবাদ জানিয়ে একটা নোটিস ঝুলালাম। জাপানিজ এবং ইংলিশে। জাপানিজের জন্য গুগল ট্রান্সলেটর এর হেল্প নিলাম। আমার জাপানিজের দৌড় আবার বেশি একটা সুবিধার না… হে হেগতকাল আবার ময়লা ফেলতে গিয়ে দেখি নোটিসটা নাই। নোটিসে লিখে দিয়েছিলাম দেখলে যেন ছিঁড়ে ফেলে। বেচারা ভুলবশতঃ আমার তালা যেহেতু ভেঙ্গেই ফেলেছে তাই বিবেকের দংশন থেকে বাঁচতে হাজার গুণ বেশি কম্পেন্সেশন দিয়ে গেল। তালার দাম ছিল ১০০ আর বেচারা আমাকে যা দিয়ে গেল টাকাসহ সেটা মিনিমাম ২৭০০-২৮০০ ইয়েনে ঠেকবে। কী এদের ব্যবহার… বাংলাদেশে হলে তো বেশিরভাগ মানুষ ভাবত, তালা ভাঙ্গাটা তার অধিকার। আমার সাথে এই কাহিনী ঘটার পরই ড. আশির আহমেদেরও এক সিমিলার অভিজ্ঞতা পড়লাম। কমেন্টে লিংক দিয়েছি। ছবিতে ভাঙ্গা তালা, গিফট আর আমার নোটিস।

মে ৩০, ২০২০ (কিতা-কু, কিয়োতো)

#সূর্যোদয়_ও_চেরিফুলের_দেশের_দিনলিপি

You may also like...