টার্কির দিনলিপি ২: শুক্রবার ও জুমার নামাজ
৩ দিনের কথা বলে নেট আসল ১০+ দিন পর। এই দিনলিপি আসলে ২ হওয়ার কথা না কিন্তু আগে লিখছি বলে ২ দিয়ে দিলাম। এর মাঝে পুরনো সাফরানবলু ঘুরে এসেছি। বেশ কিছু তার্কিশ, ইউরোপিয়ান (ইরাসমুস মোবিলিটিতে আসা) ও এশিয়ান ছেলেমেয়ের সাথেও খাতির হয়ে গেছে। অনেক ছেলেমেয়েই আমাদেরকে দেখে কথা বলতে চায় বা আমরাও অনেক কিছু জানতে চাই কিন্তু ভাষাটা অনেক বড় ব্যারিয়ার। এই ইউনিভার্সিটিতে আমরাই প্রথম বাংলাদেশি। মেভলানা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের ক্ষেত্রেও আমরাই প্রথম বাংলাদেশি। সবাই শুধু তাকিয়ে থাকে আমাদের দিকে। :v এখানে ছুটির দিন হচ্ছে শনিবার ও রবিবার, এটা আগেই বলেছিলাম। দেখতে দেখতে ২ শুক্রবার কাটিয়ে দিলাম এখানে।
১ম শুক্রবারঃ ৯/১০/১৫
আমি আর ইমরান নামাজের প্রস্তুতি নিলাম। ১২টার আগে যখন দুপুরের খাবার রান্না করছিলাম তখন শুনি আজান দিচ্ছে। ইসমেত কে জিজ্ঞেস করলাম নামাজ কয়টায়? মোবাইল দেখে বলল, ১২ঃ৪৪ এ হবে। মাসজিদ কোনটায় যাব সেটা ঠিক করতে গুগল ম্যাপের আশ্রয় নিলাম। ম্যাপ দেখে হাঁটতে হাঁটতে মাসজিদ পিছনে রেখে চলে গেলাম কারন আমি ভাবছিলাম রাস্তার মোড় মনে হয় সামনেরটা। কিন্তু বামে মোড় নেয়ার কোন রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিলামনা। কাউকে জিজ্ঞেস করতেও ইতস্তত বোধ করছিলাম। শেষে দেখি সামনে একটা ছোট ছেলে টুপি মাথায় হাঁটছে। এই এলাকায় (আমি যেখানে থাকি) টুপির ব্যবহার খুবই কম। মাসজিদে শুধু দেখেছি অল্প কয়েকজন। ওকে জিজ্ঞেস করলাম, জামি? (মানে জামে মাসজিদ?) আমার বেশভূষা দেখে জিজ্ঞেস করল, আরবী পার? বললাম, হ্যাঁ। তখন আরবীতে কথাবার্তা শুরু হলো। ও সিরিয়া থেকে এসেছে। এরপর ও মাসজিদ দেখিয়ে দিল। Dedeoğlu Cami (দেদেওলু জামি)। আক্ষেপ করে বলছিল, এখানে এত মাসজিদ কিন্তু মুসল্লি নেই। আমি মনে মনে ভাবলাম, এরা তো সেকুলারিজম থেকে জাস্ট একটু একটু করে ইসলামের দিকে আসছে। এর চাইতে বেশি আর কি আশা করা যায়। মাসজিদে ঢুকার আগে শুনি আজান হচ্ছে। ভাবলাম এটা ২য় আজান। ভিতরে গিয়ে বসলাম ২তলায়। তুর্কিশ ভাষায় ইমাম সাহেব বয়ান করছেন। বয়ান শেষে মুয়াজ্জিন দরুদ পড়লেন ছোট্ট করে জোরে। সবাই দাঁড়িয়ে গেল কাতারবন্দি হয়ে। আমি ভাবলাম জুমার নামাজ শুরু হয়ে গেছে, কিন্তু দেখি কি সবাই সুন্নত পড়ে। 😀 পরবর্তীতে এই শুক্রবারে বুঝলাম, আমরা যেটাকে প্রথম আজান মনে করেছিলাম সেটা আসলে সুর করে পড়া কিছু দোয়া। হা হা। সুন্নত শেষে ২য় আজান হলো। এরপর ইমাম সাহেব অল্প একটু আরবী বলে বাকিটা তুর্কিশ ভাষায় খুতবা দিলেন। ২য় খুতবায় ইমাম সাহেব দোয়া করার সময় সবাই হাত তোলে আমিন বলল। জুমার নামাজ শেষে সবার সুন্নত শেষ হওয়ার পর দেখলাম মুয়াজ্জিন কিছু দোয়া পড়ছেন মাইকে। আমাদের সময় না থাকায় চলে এসেছি। মনে হয় সম্মিলিত দোয়া হবে। একটা জিনিস ক্লিয়ার হতে পারিনি। ইমামের পিছনে একজনকে দেখলাম মুয়াজ্জিনের মত কিন্তু দোয়াগুলো উনি পড়ছিলেননা। আরেকজন পড়ছিলেন। দোতলা থেকে তাকে দেখতে পাইনি। ইমাম সাহেবের পোষাক হচ্ছে প্যান্ট-শার্ট নিচে আর উপরে ঐতিহ্যবাহী তার্কিশ আলখাল্লা। দাঁড়ি ছোট (সেকুলারিজমের প্রভাব থেকে এখনো এরা বেরিয়ে আসতে পারেনি। এইটুকুই আসলে এদের জন্য অনেক কিছু। ১৫-১৬ বছর আগেও তো তুর্কিতে ইসলামিস্টরা অনেকটাই নিগৃহীত ছিল। গতকাল নতুন এক তার্কিশ বন্ধুকে হাসতে হাসতে বলছিলাম, আমাদের দেশে ইমাম সাহেবের লম্বা দাঁড়ি না থাকলে মুসল্লিরা কিক আউট করে দেবে ইমামকে। 😀 )
২য় শুক্রবারঃ ১৬/১০/১৫
এ সপ্তাহে ইউনিভার্সিটির মাসজিদে নামাজ পড়লাম। স্পেশালি কিছু বলার মত নেই। একই সিস্টেম খুতবার। ২ ইমাম সাহেবেরই তিলাওয়াত মাশা’আল্লাহ বেশ সুন্দর। এখানে হানাফিদের প্রাধান্যই বেশি।
নেক্সটঃ পুরনো সাফরানবলু ভিজিটের কথা লিখব কিন্তু আনফরচুনেটলি মোবাইল থেকে সব ছবি ডিলিট হয়ে গেছে।